জপ করার পদ্ধতি

  ত্রিসন্ধ্যা বা নিত্য কর্ম করার নিয়ম: 

প্রথম কর্ম: সূর্যোদয়ের কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে। (একে বলে ব্রাহ্ম মূহুর্তে উঠা) ঘুম থেকে উঠ হাত মুখ ধুয়ে যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা গুরু স্মরণ করে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র এবং যাদের দীক্ষা বা (মন্ত্র) হয়নি তারা ঈশ্বরের যে কোন নাম জপ করবেন কমপক্ষে ১০৮ বার। করে যতবার বেশি করা যায় জপ করবেন ও ঈশ্বরের স্মরণ ও মনন করবেন। এটা হল ১ম সন্ধ্যা। এটা সূর্য উঠার আধ ঘণ্টা পর পর্যন্তর চলতে পারে।  ঈশ্বর এক ও তাঁর নানা নাম, যেমন: ওঁ (অউম্), দুর্গা, কালী, লক্ষী, সরস্বতী, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর (শিব), রাম, কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, হরি নারায়ণ ইত্যাদি।( যে যে নাম ঈস্বর কে উপাসনা করেন)  তাই উক্ত যে কোন নামে তাঁকে ডাকতে হবে একেই বলে জপ। আর তাঁর রূপকে চিন্তা করাকেই বলে ধ্যান। 

দিত্বীয় কর্ম:এভাবে স্নানের পর দুপুরে বা তার একঘন্টা আগে পরে একইভাবে কমপক্ষে ১০৮ বার করে যতবার পারবেন জপ করবেন। এভাবে ঈশ্বরের নাম করা ও তাঁর স্মরণ করা হল ২য় সন্ধ্যা।

তৃতীয় কর্ম: এভাবে সৃর্যাস্তের অর্ধ ঘণ্টা পর থেকে শােবার আগে যে কোন সময়, তবে সন্ধ্যা আরতির সময় করা বেশী উত্তম। একই ভাবে ১০৮ বা অধিক বার তাঁর নাম জপ ও তাঁকে স্মরণ করতে হবে। এটি হল ৩য় সন্ধ্যা।  এভাবে ত্রিসন্ধ্যা করা একাস্ত কর্তব্য (এছাড়াও শোবার সময় উঠার সময় হাই তােলার সময়,হাঁচি, কাশিতে সর্বদা তাঁর নাম করতে হয়)। মনে রাখতে হবে ঈশ্বরকে মহিলা, পুরুষ, আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, শরীরের যে কোন অবস্থায় যে কোন কালে, যে কোন স্থানে এমনকি বাথরুমেও তাঁর নাম মনে মনে করবেন। কারণঃ

 শ্রীম্তাগবত গীতার ৮/৫ ল্লোকে আছে:  অন্তকালে চ মামেব স্মরণ মুক্তা কলেবরম্ য়ঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং য়াতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ।  আর্থাৎ মৃত্যুকালে বা দেহত্যাগকালে যে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বা তাঁর নাম করে সে আমার ভাব  অর্থাৎ ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হয় বা ঈশ্বর লাভ করে।

 মৃত্যু মানুষকে যে কোন সময় গ্রাস করে বলে কয়ে আসে না। তাই যে কোন স্থানে দেহের যে কোন অবস্থায় মন্দিরে-শৌচালয়ে যে কোন স্থানে তাঁর নাম করা কর্তব্য।  তাই সর্বদা এমনকি শৌচ কালেও ঈশ্বরকে মনে মনে ডাকা (জপ) স্মরণ (ধ্যান) করা যায়।  সুতরাং যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা তার গুরু নির্ধারিত ইষ্ট মন্ত্র জপ করবেন।   যাদের দীক্ষা হয়নি তবুও তারা ঈশ্বরের যে কোন নামে জপ করতে পারে যেমন- ওঁ (অউম্), দুর্গা, কালী,লক্ষী, সরস্বতী, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেস্বর (শিব), রাম, কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, হরি নারায়ণ ইত্যাদি যে কোন নামে ডাকবেন।  সঙ্গে গায়ত্রী মন্ত্র জানা থাকলে সেটি পারলে জপ করা যায়।

গায়ত্রী মন্ত্রঃ  ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্ বরেণ্যং ভর্গদেবস্য ধীমহি ধিয়াে ইয়েনঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।  গায়ত্রীর অর্থঃ ভুঃ ভুবঃস্বঃ অর্থ- স্বর্গ, মর্ত্য,  অন্তরিক্ষ ব্রহ্মাণ্ড যাঁর থেকে উৎপন্ন হয়েছে সেই।

জ্যোতির্ময় পরমাত্মার ধ্যান করি, আমাদের বুদ্ধি (মতি) পরমাত্মার দিকে পরিচালিত হউক।   সর্বদা জানবেনঃ পূজার চেয়ে নামজপ বা নাম করা বড় তাঁর চেয়ে ঈশ্বরের ধ্যান করা আরাে বড়। তাই জপ, ধ্যান অবশ্যই কর্তব্য। তবে বিশেষ দিনে পূজা করা কর্তব্য। জপ ধ্যান সর্বদা কর্তব্য।   তাছাড়াও শয়নকালে বা উঠার সময়, হাঁচি,কাশি, হাইতােলা যে কোন সময় যে কোন কর্মের শুরুতে ও শেষে তাঁর নাম করা কর্তব্য। যেমন- গা মােড়াবার সময় রাম রাম, হরিবােল, দুর্গা দুর্গা, হরে রাম হরে কৃষ্ণ ইত্যাদি। তাকে হরি ওঁ তৎ সৎ নামেও ডাকা যায়। আমাদের নিজ নিজ ব্যবসা ক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র ও যানবাহনে চলাচলে সর্বত্র, বসে বসে বা হাটতে হাটতে ত্রিসন্ধ্যার সময় হলে। মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকতে পারি। নাম করতে পারি।  তাই এখন থেকে আমাদের সকলের শ্লোগান হােকঃ  সম্প্রাদায় যার যার, সনাতন ধর্ম সবার।   ইষ্ট যার যার, সৃষ্টিকর্তা সবার।             

                       "*হরে কৃষ্ণ*"

 
                 ¯\_(শ্রী কৃষ্ণ কথা)_/¯